Beyond the Quota Reform Movement – a nation-building in disarray
August 1, 2024
রাষ্ট্র বিনির্মাণে আশু পদক্ষেপের জন্য কয়েকটি প্রস্তাবনা
August 9, 2024

চলমান অধঃপতন রোধে রাজনীতির অঙ্গনে সুষ্ঠু মীমাংসা জরুরি

বণিক বার্তা |
জুলাই ৩০, ২০২৪ |

ড. সাজ্জাদ জহির |

ড. সাজ্জাদ জহির, অলাভজনক বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইকোনমিক রিসার্চ গ্রুপের (ইআরজি) নির্বাহী পরিচালক। এর আগে তিনি বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো হিসেবে কাজ করেছেন। এছাড়া তিনি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে অধ্যাপনা করেছেন। পরামর্শক হিসেবে কাজ করেছেন বিশ্বব্যাংক, আইএফসি, আইএফএডি, ইউনিসেফ, এফএও ও ডব্লিউএফপির মতো প্রতিষ্ঠানে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ থেকে স্নাতক শেষ করে পিএইচডি করেছেন কানাডার ইউনিভার্সিটি অব টরন্টোয়। কোটা সংস্কার আন্দোলন কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে সম্প্রতি কথা বলেছেন বণিক বার্তার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাবিদিন ইব্রাহিম

সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলনের ন্যায্যতা কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

তাদের কোটা নীতি সংস্কার আন্দোলনের যৌক্তিকতা প্রশ্নাতীত। যেকোনো নীতি, যা নির্দিষ্ট কোনো বাস্তবতা ও সমাজের আকাঙ্ক্ষার পরিপ্রেক্ষিতে প্রণীত হয়, তা চিরকাল স্থির থাকতে পারে না। সময় ও বাস্তবতার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সেসব নীতিতে পরিবর্তন আনা জরুরি হতে পারে।

কোটা আলোচনায় অনেকে ঘটনা-পরবর্তী পুরস্কারের সঙ্গে অনগ্রসর গোষ্ঠীকে এগিয়ে আনার (ঘটনা-পূর্ব) সুযোগ সৃষ্টির মাঝে পার্থক্য টানতে ভুলে যান। মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের জন্য সরকারি পদে নিয়োগে কোটাকে পুরস্কার হিসেবে গণ্য করা সমীচীন। প্রাথমিক পর্যায়ে সে জাতীয় কোটা ও ভাতা মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের পন্থা হিসেবে দেখি। তবে সম্মাননা পুরস্কারকে দীর্ঘস্থায়ী করার বিড়ম্বনা রয়েছে। স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় সনদ পেতে ভিড় জমেছে এবং অভিযোগ রয়েছে যে, সনদ কেনাবেচা হয়েছে ও কোনো কোনো সনদপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা আত্মীয়-স্বজনকে নিজের সন্তান দেখিয়ে তাদের সুবিধাপ্রাপ্তির সুযোগ করে দিয়েছেন। এসব কিছু একটি নিয়ন্ত্রণকারী সরকারের হাতে অনুগত্য নিশ্চিত করার হাতিয়ার তুলে দিয়েছে। অর্থাৎ কোটা নীতি, রাজনীতিতে মুক্তিযুদ্ধকেন্দ্রিক প্রাথমিক দানা বাঁধায় সহায়ক হলেও তা পর্যায়ক্রমে সব রাষ্ট্রীয় প্রশাসনে অবক্ষয় এনেছে, যা পক্ষান্তরে ক্ষুদ্র স্বার্থগোষ্ঠীর পক্ষে গেছে।

কার কাছে কোন অর্থতুল্য পুরস্কার সম্মানের এবং কোনটি অসম্মানের তা ব্যক্তিবিশেষের ওপর নির্ভর করবে। তবে নিশ্চিত জানি যে, বাংলাদেশ অর্জনের কৃতিত্ব যদি কোনো ব্যক্তি বা পরিবার এককভাবে পেতে চায় অথবা কোনো দেশের সহায়তাকে মুখ্য হিসেবে গণ্য করা হয়, তবে তা হবে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি চরম অপমান।

অহিংস ছাত্র আন্দোলন কী করে সহিংস আন্দোলনে রূপ নিল? এর পেছনে কার্যকারণ কী?

সাংবাদিকরা যারা তথ্য জোগাড় করেছেন এবং যে ছাত্রছাত্রী এ আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন, তারা এ প্রশ্নের বস্তুনির্ভর উত্তর দিতে পারবেন। বাংলাদেশের পত্রপত্রিকা পড়ে এবং টেলিভিশন ও ইউটিউবে সম্প্রচারিত প্রামাণ্যচিত্র দেখে বুঝি যে, সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কিছু ব্যক্তির লাগামহীন দম্ভসুলভ মন্তব্য এবং ক্ষমতাসীন দলের প্রতি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রশাসনের প্রশ্নহীন আনুগত্য, একটা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে আরো বেগবান করে, যা পরবর্তী সময়ে প্রতিরক্ষার তাগিদে সহিংস হতে বাধ্য হয়। উভয় (সরকার ও শিক্ষা প্রশাসন) গোষ্ঠী অভিভাবকের ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। এ দায়িত্বহীনতার কারণে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র-যুব সংগঠন এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর রক্তপিপাসু অংশের মাঝে উচ্ছৃঙ্খল আচরণ আন্দোলনকে সহিংস করতে ভূমিকা রেখেছিল এবং অন্যান্য রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক শক্তির অংশগ্রহণের ক্ষেত্র করে দিয়েছিল।

ছাত্র আন্দোলন মোকাবেলায় সরকারের বিভিন্ন বাহিনীর কঠোর দমন-পীড়ন কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?

প্রশ্নটা সরকারকে করা উচিত। দায়িত্বহীন আচরণ ও তার জন্য জবাবদিহিতার প্রয়োজনবোধ না করার অভ্যাস অনেকাংশে সাংবাদিকতার অক্ষমতার পরিচয় দেয়। যদি সমাজে কেউ পাপ করে, তবে তাকেই সরাসরি জবাবদিহি করা প্রয়োজন। যদি কেউ পুণ্য করে, তাকে প্রশংসা করার সৎ সাহসও থাকা প্রয়োজন।

রাজনৈতিক অর্থনীতিতে বছর দুয়েক ধরেই নানামুখী সংকট চলছে। নতুন এ পরিস্থিতি আমাদের সামনে কী নিয়ে আসতে পারে?

অর্থনীতিতে বহু বছর ধরেই সংকট চলছে – অসংযত বৈদেশিক ঋণ ও অনাবাসী বাংলাদেশীদের (এনআরবি) প্রেরিত অর্থ এতদিন ব্যাংক-লোপাট এবং অর্থ পাচার থেকে উদ্ভূত সম্ভাব্য বিপর্যয়কে হিসাব খাতায় ঠেকিয়ে রেখেছিল। গত দুবছরে সম্ভবত আমরা অতীত অব্যবস্থাপনার ফল দেখতে পেয়েছি, যা আগামীতে চরম রূপ নেবে মনে হয়। সার্বিক বাংলাদেশের জন্য যে নিঃস্বকরণ প্রক্রিয়া বিগত বছরগুলোয় কাগজে-কলমে ধরা পড়ছে, মিথ্যাচারের আশ্রয় না নিয়ে সেই অধঃপতন রোধ করা ও ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য রাজনীতির অঙ্গনে সুষ্ঠু মীমাংসা জরুরি।

Source: https://bonikbarta.net/print-news/392993

428